top of page

ইমিউনিটি বুস্টারসহ রান্নার তেল!প্রফেসর কৃষ্ণজ্যোতি গোস্বামী

  • সুস্বাস্থ্য প্রকাশনা
  • Jun 17
  • 9 min read

প্রফেসর কৃষ্ণজ্যোতি গোস্বামী


'ইমিউনিটি বুস্টারসহ রান্নার তেল’ টেলিভিশন ও খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন বা অপপ্রচারের ভিড়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য চাপা পড়ে যাচ্ছে কি? কেন এই ধরনের তেল কেনার বিজ্ঞাপন?

ree

কারণ, ক্রেতারা কেনেন হয় লোভে, নয় বিজ্ঞাপনের মোহে। যেন কিনতেই হয় নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমরা সত্যিই একটা খাদ্য-সংকটের মধ্যে রয়েছি এবং তা আরও বাড়ছে। কিন্তু তার অন্যতম কারণ কৃষি-বিল নয় বা খাদ্য-উৎপাদনও নয়। বরং মূল কারণ হ’ল খাদ্য ব্যবসার আধুনিকীকরণ। ওই কলুর কাঠের ঘানির সরিষার তেলের পরিবর্তে সর্দি-কাশি, প্রতিরোধ ও ইমিউনিটি বর্ধক রান্নার তেলের জয়যাত্রা। এক কথায় কর্পোরেট খাদ্য সংস্কৃতি।


দিন যত যাচ্ছে, ততই আরো ভয়াবহ হচ্ছে অর্থসংকট ও খাদ্যসংকট। খাদ্যসংকট আমাদের অজগর সাপের মতো পাকে পাকে জড়িয়ে ধরছে। কর্পোরেট বিজ্ঞাপনের হাত ধরে ট্যাঁকসই খাদ্য-পুষ্টি ক্রয় প্রায় অসম্ভব। কিন্তু প্রচার ও উন্নয়নের সম্মোহনে আমরা ঝাঁপাই সেই উন্নয়নের আগুনের দিকে। বিজ্ঞাপনের তাড়নায় অপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনছি বটে, তবে সেটা কি আদৌ নিরাপদ? আসলে যেসব প্যাকেটজাত বহু বিজ্ঞাপিত খাদ্য ও পানীয় আমরা আনন্দে খাই বা পান করি খোঁজ নিলে দেখা যাবে, কর্পোরেট বিজ্ঞাপিত ফ্যাশনেবল খাবারদাবার জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে ঘোরতর বিপদের কারণ। গরিবরা এতদিন মরত না খেয়ে আর উন্নয়নের নামে এবার ভুল খেয়ে মরার পথে। খাবারের ব্যবসা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবসা। সস্তা থেকে দামী সবরকম খাবার নিয়েই এই কারবার, আর এদের বিজ্ঞাপিত খাবার যা আমরা প্রতিদিনই গোগ্রাসে খাচ্ছি বা গিলছি, সে’গুলিই হল যাবতীয় অসংক্রামক রোগের উৎস।

ree

এরই মধ্যে ভোজ্য তেলের বিষয়টি বহুবিতর্কিত, কি ধরনের ভোজ্য তেল স্বাস্থ্যকর বা কতটা খাওয়া উচিত– বা কেবলমাত্র নিজের রুচি ও রসনার উপরে এটা ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে কি? ভোজ্য তেল– খাবারের স্বাদ বাড়ায়, আবার শক্তি বা ক্যালোরি যোগানের দিক দিয়ে শক্তিশালী। ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে – কেবল স্নেহজাতীয় খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। জীবকোষের আবরণ, স্নায়ুতন্ত্রসহ আমাদের শরীরের বেশ কিছু উপাদান গঠনের জন্য তেল জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন। অর্থাৎ, আমাদের দৈনন্দিন খাবারে ভোজ্য তেলের প্রয়োজন আছে। তবে ক্যালোরির মাপে মোট খাবারের ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ শতাংশ ভোজ্য তেল হওয়া উচিত। এখনকার খাবার অনেকাংশে প্রক্রিয়াজাত, পরিশোধিত ও শক্তিতে ভরপুর। এইসব খাবারে চাই লাগাম, প্রয়োজন সঠিক খাবার নির্বাচন। আর এই সুখাদ্য নির্বাচনের জন্য আমাদের জানতে হবে কতটা খাব ও কী খাব?


মহিলারা যাঁরা সর্বক্ষণ সাধারণ কাজকর্ম করেন,– তাঁদের দৈনিক 1400 কিলোক্যালোরি খাদ্যের প্রয়োজন, আর পুরুষদের 2300 কিলোক্যালোরি। যাঁরা খুব বেশি কায়িক তথা শ্রমসাধ্য কাজ করেন, তাঁদের চাই দৈনিক 4900 কিলো ক্যালোরি খাদ্য। স্থূলকায় হলে, দেহের ওজন কমানোর জন্য দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ থেকে অন্তত 400 কিলো ক্যালোরি বাদ দিয়ে দিন। খাদ্যের মোট ক্যালোরির ত্রিশ শতাংশই স্নেহজাতীয় খাদ্য বা ভোজ্য তেল থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু মুশকিল হ’ল সব কিছু বুঝেশুনে রান্নার তেল বা ভোজ্য তেল কেনার মতো কঠিন কাজ আর হয় না। দুর্বোধ্য শব্দে তেলের প্যাকেটের বাইরে নানান রাসায়নিক বিশ্লেষণী লেবেল লাগানো থাকে।

ree

স্যাচুরেটেড ফ্যাট, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (PUFA), রিফাইন্ড তেল, ডাবল রিফাইন্ড তেল, বনস্পতি, ক্যানুলা তেল— আরও কত কি! এছাড়াও আছে তেলের হরেকরকম উৎস– সূর্যমুখী বা কুসুম বীজের তেল, রাইস্‌-ব্র্যান্ড তেল, রেপসীড তেল, পাম তেল, অলিভ বা জলপাই তেল, তিল্‌ তেল, নারকেল তেল, বাদাম তেল, বিশুদ্ধ ঘি, আর বাঙালির অতি প্রিয় ‘সরিষার তৈল’। আর এখন বাজারে হাজির– পাঁচটি ইমিউনিটি বুস্টারসহ রান্নার তেল! এতসব দেখে হতবুদ্ধি হয়ে যাবার জোগাড়। পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে খুব বেশি সরষের তেল ব্যবহার করা হয়। গুজরাট, মহারাষ্ট্রে বাদাম তেল, তামিলনাড়ুতে তিল তেল, কেরালাতে নারকেল তেল এবং পুণে ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে সূর্যমুখী বা কুসুমবীজের তেলের প্রচলন দেখা যায়। স্থানীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভর করেই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন তেলের ব্যবহার প্রচলিত।


এতদিনে নিশ্চয়ই বিজ্ঞাপন দেখেছেন বিভিন্ন রকমের রান্নার তেলে ভাজা অতিরিক্ত হাল্কা ভাজাভুজির সঙ্গে সুস্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক! সানফ্লাওয়ার তেল বা সূর্যমুখীর তেল ও রাইস ব্র্যান বা চালের তুষের তেল– আপনার হৃদয়কে সুরক্ষা দেয় আর বিপজ্জনক কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এখন তো আবার ফ্ল্যাট কালচারে অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ঘরে না থাকলেই নয়! চোখে জল আনা সরষের তেলের কথা বেশি না বলাই ভালো! কারণ, কে বিচার করবে চেখে! জল আসছে সরষের জন্য নয়, এই ঝাঁঝ আসলে পেঁয়াজের রস মেশানোর জন্য। নানান বিজ্ঞাপনের মোড়কে এখন ভোজ্য তেলের দামও আকাশ ছোঁয়া। খাদ্যে যদি কোলেস্টেরল না থাকে, তাহলে বিভিন্ন তেল খাবারে কোনো বাধা নেই। শুধু তেল খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের কোনো পরিবর্তন হয় না। বলে রাখা ভালো– বিভিন্ন ভোজ্য তেলে, এমনকি সরষের তেলেও কোনো কোলেস্টেরল নেই।

ree

বাঙালি, ওড়িয়া, বিহারীরা বংশ পরম্পরায় সরষের তেল খেয়ে আসছে। সরষের তেল হৃদপিণ্ডের পক্ষে ক্ষতিকারক হলে বাঙালিজাতি এতদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। তাই বিজ্ঞাপনের চমকে সরষের তেল না খেয়ে অন্যান্য তেল খাবার কি দরকার। যদি বাঁচতে চান! সঠিক ভোজ্য তেল বেছে নেওয়াটা বেশ কঠিন। তবে অনেক চিকিৎসকও মনে করেন, সরষের তেলের ইউরিমিক অ্যাসিড হৎপিণ্ডের ক্ষতি করে। এছাড়া রেপসীড ব্যতীত আর অন্য কোনও ভোজ্য তেলে ইউরিমিক অ্যাসিড নেই। ক্যানোলা তেল হল সরষের বীজের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে কানাডায় আবিষ্কৃত ভোজ্য তেল, যাতে ইউরিমিক অ্যাসিডের বদলে উপকারী লিনো লেইক অ্যাসিড থাকে। তিসির তেল, ক্যানোলা তেল, রেপসীড অয়েল, সয়াবীন তেল, সরষের তেলে লিনোলিক ও লিনোলেনিক অ্যাসিড দুই-ই আছে, আর অন্য কোনো ভোজ্য তেলে লিনোলেনিক অ্যাসিড নেই বললেই চলে। আমাদের খাদ্যে– এই দুই ফ্যাটি অ্যাসিডের সমতা থাকা অত্যন্ত জরুরী।


সূর্যমুখী ও কুসুমবীজের তেলে প্রচুর পরিমাণে লিনোলিক অ্যাসিড আছে। আমাদের খাদ্যে লিনোলেনিক অ্যাসিড না থাকলে, ওইসব তেলের লিনোলিক অ্যাসিড রক্তের কোলেস্টেরল বাড়াতে থাকে, ফলে ধমনীর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। ডিমের কুসুম, দুধের মাখন, ঘি, মেটে (লিভার) ও মাংসের মধ্যে কোলেস্টেরল আছে। তবে, মাছেও আছে, কিন্তু মাছের তেলে লিনোলিক অ্যাসিড, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি আসিড থাকায় মাছের তেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে যায়। সাধারণত তৈলাক্ত মাছ—টুনা, স্যামন, সারডিন, ম্যাকারেল, হেরিং-মাছে বেশি পরিমাণে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। তবে আমাদের ইলিশ, গুরজালি, খয়রা মাছেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যদি হৃদরোগীরা কোলেস্টেরল যুক্ত খাদ্য গ্রহণ না করেন, তাঁরা সব রকম ভোজ্য তেলই খেতে পারেন। এছাড়া সরষের তেলে থাকা লিনোলেনিক অ্যাসিড শরীরে রাসায়নিক ভাবে ক্ষতিকারক ট্রাই-গ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও ডায়াটিনের সম্ভাবনা কমায়। কাজেই সরষের তেল খাওয়াই শ্রেয়। আমাদের প্রতিদিন 40 থেকে 50 গ্রাম ভোজ্য তেল প্রয়োজন। অন্যদিকে 65 গ্রামের বেশি গ্রহণে হৃদরোগ ও সেরিব্রাল স্ট্রোকের সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সুতরাং খাদ্য তালিকায় তেল এবং তৈলাক্ত খাবার, যেমন—মাংসের ওপর রাশ টানা প্রয়োজন।

ree

ভোজ্য তেল নির্বাচনের সময় আমাদের চারটি বিষয় মনে রাখতে হবে।

প্রথমত, আমাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপে আনস্যাচুরেটেড বা অসংপৃক্ত তেল সহজে হজম হয়। কিছু ভোজ্য তেল—নারকেল তেল, পাম তেল, নারকেল তেল, সম্পূর্ণভাবে সংপৃক্ত বা স্যাচুরেটেড তেল। এইসব তেল যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। এই তেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, সেরিব্রাল স্ট্রোক ছাড়াও স্তন, মলাশয়, ওভারি, ও প্রস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এমনকি রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও কমে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট—এটা অত্যন্ত উপকারী। অলিভ ওয়েল বা জলপাই তেল, ক্যানোলা তেল, সরষের তেল, বাদাম তেল হল এই ধরনের তেল। এইসব তেল রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়ায় না।


তৃতীয়ত, পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট—বিশেষত ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদরোগ, ক্যান্সার, আরথ্রাইটিসসহ অনেক অনিরাময় যোগ্য রোগ প্রতিরোধ করে। ভিটামিনের মতো ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে তৈরি হয় না, খাবারের মাধ্যমে সরাসরি গ্রহণ করতে হয়। মাছ হল ওমেগা-থ্রি ফ্যাটের প্রধান উৎস। মনে রাখতে হবে, মাছ ভাজলে তাতে আর ওমেগা-থ্রি ফ্যাট পাওয়া যাবে না। জাপানীদের মতো তাজা ও কাঁচা মাছ খাওয়া অভ্যাস করতে পারলে সবথেকে উপকারী। অন্যথায় না ভেজে সেদ্ধ করলে কিছুটা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যেতে পারে।


চতুর্থত, ট্রান্স-স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এটি সবথেকে বেশি ক্ষতিকারক। সমস্ত ধরনের প্যাকেট বন্দী খাবারই হল এই ট্রান্স ফ্যাটের উৎস। তাই খাবারের প্যাকেটে যদি ট্রান্স ফ্যাট বা আংশিক ভাবে হাইড্রোজেন যুক্ত তেল থাকে, তা’ হলে– সেই খাবার সম্পূর্ণভাবে পরিহার যোগ্য। তাছাড়া তেলে ডুবিয়ে ভাজা যে কোনও খাবারই ট্রান্সফ্যাট পূর্ণ এবং তা বর্জনীয়। প্রচলিত সুস্বাদু খাবার—সিঙ্গাড়া, চানাচুর, রোল, কাটলেট, লুচি, পরোটা, কচুরী, প্যাস্ট্রি, পিৎজা, আলু ভাজা বা পটেটো চিপস্‌ বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন, মার্জারিন হল ট্রান্সফ্যাট সমৃদ্ধ। তবে ট্রান্সফ্যাট দিয়ে তৈরি খাবার দীর্ঘস্থায়ী ভাবে সুস্বাদু থাকে ; প্যাকেটজাত খাবারের প্রস্তুতকারকদের তাই প্রথম পছন্দ ট্রান্সফ্যাট যুক্ত তেল।


তা’ হলে এক কথায় মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ওমেগা 3 সমৃদ্ধ পলি অ্যানস্যাচুরেটেড তেলই শ্রেয়। অন্য দিকে দেখতে হবে, যে তাপমাত্রায় গরম করলে তেল থেকে ধোঁয়া বেরোয়, যত বেশী ধোঁয়া হবে, সেই তেল তত উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার পক্ষে উপযুক্ত। বিভিন্ন রান্নার প্রয়োজনে শুকনো কড়াইতে তেল ঢেলে গরম করতে থাকলে, এক সময় তেল থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। এই সময় তেল থেকে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ফ্রি-র্যাডিক্যাল তৈরি হয়, সেটা সর্বতোভাবেই পরিহারযোগ্য।


একমাত্র ঘানিতে কোনওরকম রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার না করে সরষে বা অন্য শস্যবীজকে সরাসরি চেপে বা পেষাই করে তেল নিষ্কাশন করা হয়। এইভাবে প্রস্তুত তেলই প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও শ্রেয়।


অন্যান্য সমস্ত সস্তার তেলেই নানা রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করে 500 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় গরম করে নিষ্কাশন করা হয়। এতে তেলের উপকারী ভিটামিন ও অন্যান্য গুণাগুণ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তেলের প্যাকেটের ওপর যদি নিষ্কাশনের পদ্ধতি উল্লেখ না থাকে, তাহলে জানবেন এই পদ্ধতিতেই তেল নিষ্কাশিত করা হয়েছে।


তেল নিষ্কাশনের পর তেলকে আরও উপাদেয় ও উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার উপযোগী করার জন্য তেলের মধ্যে ভাসমান ও অবাঞ্ছিত স্বাদ ও গন্ধের পদার্থগুলো ফিল্টার করে বাদ দিয়ে পরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। যদিও এই পদ্ধতি তেলকে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার উপযোগী করে তোলে, কিন্তু ভিটামিন সহ অন্য অনেক উপকারী গুণ এইভাবে প্রস্তুত করা তেল হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে অপরিশোধিত তেল ঘানি থেকে সরাসরি বোতলবন্দি করা হয়, এতে সাধারণত তীব্র ঝাঁঝ ও গন্ধ থাকে। এই ঘানির তেল বেশি স্বাস্থ্যকর হলেও উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার জন্য অনুপযোগী; আর তেল নিষ্কাশনের পর বেশিদিন ভালো থাকে না ; তাই অল্প দিনের মধ্যেই ব্যবহার করে ফেলতে হয়।

ব্র্যান্ড শোভিত– ‘উন্নয়নের খাদ্য-বাজার’-এ ইমিউনিটি তেলের বিজ্ঞাপন হচ্ছে– ‘ইমিউনিটি অফ ইন্ডিয়া’– সৌজন্যে মহামারী সময়ের কারবারীরা। আমাদের সামনে হাজির করা হয়, – প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বহু বিচিত্র রূপ, রং, গন্ধ। আসলে এইসব খাদ্যদ্রবের উপাদানের দিকে নজর দিলেই তা টের পাবেন। যদিও তা এত ছোট হরফে লেখা থাকে, তা আতস কাঁচ ছাড়া পড়া বেশ কঠিন। যতই লো-ফ্যাট, হৃদরোগ প্রতিরোধক, ডায়াবেটিস প্রুফ, ইমিউনিটি বুস্টার, সর্দি-কাশির প্রতিরোধক ইত্যাদি বলে সম্ভার সাজানো হোক না কেন, এরা আসলে গুটি কয়েক রাসায়নিকের মাত্রার উনিশ-বিশ ঘটিয়ে পরিবেশন করার কায়দা। আর আমরা প্রায়শই তাই প্রতারিত হই। কাজেই নুন বলুন বা ভোজ্য তেল—‘উনিশ-বিশ করেই আমাদের নানা কায়দায় গেলানো হচ্ছে। যদিও তা না জেনে আমাদের নিজেদের ভাগ্যের ওপর যখন-তখন দোষ দিই, আসল শত্রুটিকে আমরা চিনতে পারি না। আর যারা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না’ তারাও ভয়ে ও বিজ্ঞান ও বিজ্ঞাপনের ভক্তিতে যা আসলে শত্রু, সেসবকেই আঁকড়ে ধরতে চান! তাই কতটা তেল খাবেন, কোন তেল বাছবেন, আর কীভাবে রান্না করবেন—এগুলোকে নিয়ে একসাথে ভাবুন। বিজ্ঞাপনের তাড়নায় বা ষড়যন্ত্রে প্রলোভিত হবেন না। সুস্থ থাকুন।


তেলের পুষ্টিগুণ ও ধরণের ওপর নির্ভর করে কোন তেলে কী রান্না করা উচিত। নিচে কিছু জনপ্রিয় তেল ও তাদের উপযুক্ত ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

ree

সরিষার তেল:

ব্যবহার: ভাজা, ঝাল মসলাদার খাবার, আচার

কারণ: উচ্চ ধোঁয়া বিন্দু (smoke point), শক্তিশালী স্বাদ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ

ree

সয়াবিন তেল:

ব্যবহার: ভাজা, রান্না, সস

কারণ: উচ্চ ধোঁয়া বিন্দু, ভিটামিন E সমৃদ্ধ

ree

সূর্যমুখী তেল:

ব্যবহার: হালকা ভাজা, বেকিং

কারণ: হালকা স্বাদ, ভিটামিন E সমৃদ্ধ

ree

অলিভ অয়েল:

ব্যবহার: সালাদ, সস, হালকা ভাজা

কারণ: মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ

ree

নারকেল তেল:

ব্যবহার: মিষ্টি খাবার, কারি, দক্ষিণ ভারতীয় রান্না

কারণ: স্যাচুরেটেড ফ্যাট, দ্রুত হজমযোগ্য

ree

তিলের তেল:

ব্যবহার: এশিয়ান রান্না, ড্রেসিং

কারণ: অ্যারোমাটিক স্বাদ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ

ree

ঘি:

ব্যবহার: কারি, মিষ্টি, ভাজা

কারণ: উচ্চ ধোঁয়া বিন্দু, ভিটামিন A, D, E, K সমৃদ্ধ


বিশেষ পরামর্শ:

উচ্চ তাপে রান্নার জন্য সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, বা সূর্যমুখী তেল ভালো।

হালকা ফ্রাই বা সসের জন্য অলিভ অয়েল বা তিলের তেল ব্যবহার করা ভালো।

স্বাস্থ্যকর রান্নার জন্য ট্রান্স ফ্যাটবিহীন তেল বেছে নিন।

সুস্বাস্থ্যের রান্না

মৌসুমী চক্রবর্তী

ভাপা চিকেন

ree

উপকরণ

বোনলেস চিকেন-1 কিলো, 2 ইঞ্চি আদা, 15 কোয়া রসুন, 2 টি পেঁয়াজ, 4-5 টি কাঁচা লঙ্কা, 1 চামচ চিনি, 10 টি কাজু, 1 চামচ হলুদগুঁড়ো, পরিমাণমতো লঙ্কাগুঁড়ো, লবণ, মিক্সিতে দিয়ে পেস্ট করে নিন। সাদা তেল, শুকনো লঙ্কা ও তেজপাতা। কুচনো পেঁয়াজ 2 টো, ফেটানো দই 2 চামচ।

প্রণালী

কড়াইতে সাদা তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা ফোড়ন দিন। কুচনো পেঁয়াজ দিয়ে বাদামি করে ভাজুন। আদা, রসুন, লঙ্কা, পেঁয়াজের মিশ্রণ দিয়ে কষতে থাকুন। তেল ছাড়লে দই-এর পেস্টটা দিন। ভালো করে কষিয়ে তারপর চিকেন ঢেলে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে আঁচ বন্ধ করে দিন। কড়াইয়ের সমস্তটা টিফিন বক্সে ভরে বন্ধ করুন। কড়াইতে একটা স্টিলের ট্রিভেট রেখে জল দিন যাতে জল ট্রিভেটের কানা পর্যন্ত যায়। টিফিন বক্সটি বসিয়ে মাঝারি আঁচে 30-45 মিনিট রাখুন। আঁচ বন্ধ করে টিফিন বক্স ঠান্ডা হলে গরম মশলা দিয়ে ভালো করে নেড়ে পরিবেশন করুন।

ree

কচু বাহারি


উপকরণ

মুখী কচু হাফ কেজি, 3 চামচ মগজ বাটা, 7-8 টা কাজু বাটা, 4 চামচ পোস্ত বাটা, 2 চামচ ফেটানো দই, গোটা গরম মশলা থেঁতো 1 চামচ, 7-8 টি কাঁচা লঙ্কা, সাদা তেল 2 চামচ, ঘি 2 চামচ।


প্রণালী

কচুগুলো ছুলে নিয়ে লম্বা করে 2 ভাগ করে কেটে নিয়ে হালকা করে একটু লবণ মেখে সামান্য ভেজে নিতে হবে কম আঁচে, যাতে কিছুটা সেদ্ধ হয়ে যায় এবং লাল হয়ে না যায়, সাদা রং টা থাকে (এটি হলুদ ছাড়া রান্না)। কচুগুলো নামিয়ে রেখে কড়াইতে সাদা তেল দিন, গরম হয়ে গেলে 2 টো তেজপাতা ও ঘি’টা দিয়ে দিন। এবার গরম মশলা থেঁতোটা ফোড়ন দিয়ে কাজু বাটা, পোস্ত বাটা, মগজ বাটা, 4-5টি কাঁচা লঙ্কা বাটা, ফেটানো দই ও পরিমাণ মতো নুন আর চিনি দিয়ে কষাতে হবে। তেল ছেড়ে দিলে ভাজা কচুগুলো দিয়ে হালকা আঁচে কষাতে হবে, সেদ্ধ হয়ে গেলে 1 কাপ গরম জল দিয়ে ফুটতে থাকুক। থকথকে হয়ে গেলে নামিয়ে কাঁচা লঙ্কা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

ree

ডাল কলমী


উপকরণ

কলমী শাক এক আঁটি, মুগ ডাল এক কাপ, জিরে-আদা বাটা দু’চামচ, লম্বা করে আলু কাটা দুটো, লম্বা করে বেগুন কাটা এককাপ, লম্বা করে পটল কাটা এক কাপ, 4 টে কাঁচা লঙ্কা, পরিমাণ মতো নুন ও হলুদ, 1 চামচ চিনি, শুকনো লঙ্কা 4 টে, 1 চামচ গোটা জিরে।


পদ্ধতি

প্রথমে কলমী শাক ভালো করে ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে রাখুন। মুগ ডাল সেদ্ধ করুন এমনভাবে যে ডাল সেদ্ধ হবে কিন্তু গলে যাবে না। এবার কড়াইতে তেল দিন, গরম হলে জিরে ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন, এবার কেটে রাখা আলু ছেড়ে দিয়ে ভাজতে থাকুন। তারপর পটল ও বেগুন দিয়ে ভেজে নিন। এবার জিরে-আদা বাটা দিয়ে লবণ, অল্প হলুদ, চিনি, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে কষতে থাকুন, তেল ছেড়ে দিলে কলমী শাক দিয়ে কষতে হবে। শাকটা মজে গেলে সেদ্ধ মুগ ডাল ঢেলে দিন কড়াইতে। একটু নেড়েচেড়ে বড় এক কাপ গরম জল ঢেলে দিন। ফুটে থকথকে হয়ে গেলে নামিয়ে দিন এবং পরিবেশন করুন।

ree

কাশ্মিরী এঁচোড়


উপকরণ

এঁচোড় আধ কেজি, কাজু 50 গ্রাম, মগজ 10 গ্রাম, ঘি 3 চামচ, টক দই 2 চামচ, গোটা গরম মশলা থেঁতো 2 চামচ, সাদা তেল পরিমাণ মতো, কাঁচা লঙ্কা 7-8টা, নুন ও চিনি পরিমাণ মতো, বড়ো পেঁয়াজ কুচি 4 টে।

প্রনালী

এঁচোড়গুলো চৌকো করে একটু বড়ো বড়ো করে শুধু পিঠের দিকটা কেটে ধুয়ে গরম জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর তুলে নিয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। কড়াইতে সাদা তেল দিয়ে এঁচোড়গুলো চিনি ও নুন মাখিয়ে হালকা ভেজে তুলে নিন। 4 টে পেঁয়াজ কুচি ভেজে তুলে রাখুন। ওই তেলে 3 চামচ ঘি গরম করে থেঁতো গরম মশলা ফোড়ন দিন। এবার কাজুবাদাম বাটা, মগজ বাটা, টকদই, পরিমাণমতো নুন, চিনি, কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে কষাতে হবে। তেল ছেড়ে দিলে এঁচোড়টা দিয়ে আবার কষিয়ে সেদ্ধ হয়ে গেলে গরম জল দিয়ে ফোটাতে হবে। গ্রেভি ঘন হয়ে এলে চেরা কাঁচা লঙ্কা ও লাল করে পেঁয়াজ ভাজা ছড়িয়ে দিতে হবে।

 
 
 

Comments


Suswastha.png

Address: 2A Mandeville Gardens. Kolkata 700019

Email : suswastha9@gmail.com 

Follow us on

  • Facebook

© Copyright 2025, All rights reserved by Suswastha Publication. Developed by Simpact Digital (Unit of Debi Pranam)

bottom of page