ব্লাড প্রেসার বাড়া-কমায় -হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বৈকল্য
- Ayan Ghosh

- Jan 15
- 2 min read
ডাঃ প্রলয়েশ চ্যাটার্জি (বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, কোঠারি হসপিটাল)মোবাইল 9831122368

যারা সারা বছর রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, সেই সব ব্যক্তিদের নিয়মিত রক্তচাপ মাপা উচিত। যদি ওপরের দিকে রক্তচাপ 140 বা তার বেশি এবং নীচের দিকে 90 বা তার বেশি হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা বা বমি ভাব হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। যেমন—হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বৈকল্য ইত্যাদি।

95 শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না। বাকি 5 শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্য বিভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় —প্রাইমারি হাইপার টেনশন এবং সেকেন্ডারি হাইপার টেনশন।
প্রাইমারি হাইপার টেনশন যে কারণে হয় তার মধ্যে অন্যতম হল ওবেসিটি। এছাড়া আছে রেস্টুরেন্ট-হোটেলের খাবার, ফাস্টফুড, মদ্যপান, ধূমপান, কাঁচা নুন, অ্যাংজাইটি, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি কারণ।
সেকেন্ডারি হাইপার টেনশন হয় শারীরিক নানা রোগের জন্য। যেমন কিডনিজনিত সমস্যা বা রেনাল ফেলিওর থেকে রক্তচাপ বাড়ে। কিডনির টিউমার থেকে ব্লাডপ্রেসার বাড়ে। ডায়াবেটিসের কারণেও বাড়ে। এছাড়া আরো কিছু রোগ আছে যা থেকে ব্লাডপ্রেসার বাড়ে। সেকেন্ডারি হাইপার টেনশনের প্রধান কারণ ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাটি ফুড গ্রহণ।

হঠাৎ ব্লাড প্রেসার বাড়লে কীভাবে বোঝা যাবে
অনেকের অনেক রকম লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন কারো মাথাব্যথা করে, হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায়, হঠাৎ ভীষণ অস্বস্তি শুরু হতে পারে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্লাডপ্রেসার যদি তখন মাপা হয় তাহলে দেখা যাবে ব্লাডপ্রেসার অনেক বেশি।
হঠাৎ রক্তচাপ বেশি হওয়ার কারণ—ব্লাডপ্রেসার বাড়াটি ধীরে ধীরে শুরু হয়েছিল কিন্তু সেটাকে আগে ফলো আপ করা হয়নি, চিকিৎসা করা হয়নি। বরং যেসব জিনিসগুলো বন্ধ করা উচিত ছিল সেগুলো বন্ধ না করে চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার কারণে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেছে।
কিডনিতে টিউমার হলে সেই টিউমার থেকে অ্যাড্রিনালিন এবং ননঅ্যাড্রিনালিন হঠাৎ হঠাৎ বের হতে শুরু করে। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। আরো কিছু টিউমার আছে সেগুলোও হঠাৎ করে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
রক্তচাপ বাড়লে কী হয়
রক্তচাপ বাড়লে অনেক কিছু হতে পারে। যেমন—
মাথার আর্টারি ফেটে গিয়ে সেরিব্রাল হেমারেজ, মাথার আর্টারি বন্ধ হয়ে সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওর।
কিডনি ফেলিওরের মতো ঘটনা ঘটে হঠাৎ ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যাওয়ার জন্য।
আর একটা মারাত্মক জিনিস হয় যেটা আমরা বুঝতেও পারি না। রক্তচাপের কারণে যে ধমনীগুলোর ভিতর দিয়ে পরিস্রুত রক্ত যায় সেই ধমনীতে যে তিনটে লেয়ার আছে সেই লেয়ার যদি ছিঁড়ে যায়, সেখানে একটা অ্যানিউরিজম তৈরি হয়ে সেটা যদি ফেটে যায় তাহলে কিন্তু মৃত্যু নিশ্চিত।
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে কারা আছেন
স্থুলকায় ব্যক্তি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী এবং যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাপনে আনতে হবে কিছু পরিবর্তন। ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে। খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ অর্থাৎ পাতে নুন খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। দিনে অন্তত 30 মিনিট জোরে হাঁটতে হবে, সপ্তাহে পাঁচদিন করে। ধূমপান করা যাবে না, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থাকলে তা কমাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাত্রার পরিবর্তন সত্ত্বেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এলে তাকে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং তা যে কোনও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এসে গেলেও প্রতি তিন মাস অন্তর ব্লাডপ্রেসার মাপতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে।

রক্তচাপ কমে গেলে কী হয়
ব্লাডপ্রেসার কমে গেলে সিভিয়ার উইকনেস বা দুর্বলতা দেখা দেয়। চোখেমুখে অন্ধকার, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গরমকালে যদি বেশি ঘোরাঘুরি হয় তাহলে প্রচুর ঘাম হয়। ঘামের ফলে শরীর থেকে জলের সঙ্গে নুন বা সোডিয়াম বেরিয়ে যায়। সেই সময় হঠাৎ রক্তচাপ কমে যেতে পারে। একে হাইপো ভলিমিয়া বলে। এক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় কিংবা নুন জল খাওয়াতে হয় এ সময়। নুনের পরিমাণ মাপতে হয়, প্রস্রাব কতটা বের হচ্ছে সেটা দেখতে হয়। সোডিয়াম-পটাশিয়ামের পরিমাণ মাপতে হয়। প্রস্রাব কমে গেলে গন্ডগোল হতে পারে, সেজন্য প্রস্রাব যাতে সঠিক পরিমাণে হয় তার ব্যবস্থা করতে হয়।
অনেকে বলে ব্লাডপ্রেসার হাই হলে তার ওষুধ আছে, কিন্তু লো হলে কোনো ওষুধ নেই। এটা ভুল কথা। ব্লাডপ্রেসার লো কী কারণে হচ্ছে সেটা জানতে হবে।
কারো ব্লাডপ্রেসার চেক করে দেখা গেল 110/70। কোনো ডাক্তার দেখে বললেন ব্লাডপ্রেসার তো কম আছে। কিন্তু আগে কি কখনও চেক করে দেখা হয়েছে—এটা জানা জরুরি। অথবা মাঝে মধ্যে ব্লাডপ্রেসার চেক করায় কিনা সেটা জানা দরকার। এছাড়া জানতে হবে ব্লাডপ্রেসার কমের কারণে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা—যেমন মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে কিনা। তারপর দেখতে হবে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে জল আছে কিনা। নুনের পার্সেন্টেজ ঠিক আছে কিনা। যদি কম থাকে তাহলে নুন লেবুর জল, নুন জল খাওয়াতে হবে। জল কম থাকলে বেশি করে জল খেতে হবে। এছাড়া ওষুধও আছে। তবে কারণটা আগে জানতে হবে।
প্রেসার লো হলে ঘন ঘন খাবার খান। বেশি সময় খালি পেটে থাকলে রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। খাওয়ার সময় পাতে এক চিমটে লবণ খেতে পারেন।
যারা লো প্রেসার নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাদের চিন্তিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। দুর্বল মানুষ বলেই লো ব্লাড প্রেসার হবে এমন ভাবা অনুচিত। অনেক মোটা মানুষেরও লো প্রেসার থাকতে পারে।
লো প্রেসার বিভিন্ন কারণে হয়। কোনো কারণে শরীর জলশূন্য হলে, ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হলে, ঠিকমতো না খেলে, হজমে দুর্বলতা, কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হলে, শরীরে হরমোন জনিত ভারসাম্যহীনতা হলে কিংবা রক্তশূন্যতা থাকলে লো প্রেসার হওয়ার সম্ভাবনা।

লো প্রেসারে সাবধানতা অবলম্বন
এই কারণগুলোয় সাবধান হোন—
মাথা ঘোরা।
মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
বসা বা শোয়া থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা।
চোখে ঝাপসা দেখা।
খুব বেশি তেষ্টা পাওয়া।
মানসিক অবসাদগ্রস্ততা।
ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া বা হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া?
হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া অস্বাভাবিকভাবে পালসের গতি বেড়ে গেলে বুঝতে হবে লো ব্লাড প্রেসার।

Comments