হৃদয়ের যত্ন নিন
- সুস্বাস্থ্য প্রকাশনা
- Jan 5
- 5 min read
লিখছেন ডাঃ অঞ্জনলাল দত্ত, ডাঃ ডি. কর, ডাঃ শঙ্কর কুমার চ্যাটার্জী

হার্ট অ্যাটাক কি এড়ানো সম্ভব
ডাঃ অঞ্জনলাল দত্ত
(বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট)
মোবাইল : 9830040880
খারাপ কোলেস্টেরল জমতে জমতে হঠাৎ একদিন ধমনীর রক্ত সঞ্চালনের পথ বন্ধ করে দেয়। আর করোনারি আর্টারির পথ যখন সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যায় তখন হার্ট অ্যাটাকের পরিস্থিতি তৈরি হয়। আবার যখন আংশিক বন্ধ হয় তখন হার্টঅ্যাটাক হয় না, তবে বুকে ব্যথা হয়। বিশেষত হাঁটাচলা করলে। তখন এ অবস্থাকে স্কিমিক হার্ট ডিজিজ বলা হয় বা ইস্কিমিয়া বলা হয়। এ অবস্থায় হৃদপেশি রক্তাল্পতায় ভুগলেও কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যায় না। এ অবস্থাকে আমরা বলি ক্রনিক করোনারি সিনড্রোম। হঠাৎ করে বুকে ব্যথা, শাসকষ্ট ইত্যাদি হলে সেটাকে বলা হয় অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম বা হার্ট অ্যাটাক। এক্ষেত্রে হার্টে রক্ত সঞ্চালন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ অ্যাকিউট বলতে হঠাৎ করে যে হার্ট অ্যাটাকের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এবং ক্রনিক বলতে দীর্ঘদিন ধরে রক্ত সঞ্চালনে বাধা বোঝায়।
ক্রনিক করোনারি সিনড্রোমে হাটতে, চলতে গেলে বুকে চিনচিন করে ব্যথা হয়, শাসকষ্ট হয়। এটা পরিশ্রম করলে বাড়ে।
অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোমে বিশ্রাম অবস্থাতেও বুকে ব্যথা বা শাসকষ্ট হয়।

হার্ট ব্লকে ফ্যাটের ভূমিকা
হৃদপেশিতে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি হওয়ার অর্থ এখানে ব্লকেজ আছে। এই ব্লকেজের একটা বড় অংশ হল ফ্যাট বা এল.ডি.এল কোলেস্টেরল। তবে এই ফ্যাট ছাড়া আরও কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলোকে আমরা বলি মেজর করোনারি ইনফার্কটর। এগুলো যদি ফ্যাটের সঙ্গে থাকে তাহলে আরও ক্ষতি হয়। যেমন যাদের খুব ভারি শরীর তাদের রক্তে এই কোলেস্টেরল বেশি পাওয়া যায়। মোটামুটিভাবে এল.ডি.এল বা খারাপ কোলেস্টেরল 100-র নীচে এবং ট্রাইগ্লিসারাইড 150-এর নীচে থাকা উচিত। আর এর সঙ্গে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচ.ডি.এল 40-এর ওপরে থাকা উচিত।
ফ্যাটের নামকরণ এভাবে করা হয়—
খারাপ কোলেস্টেরল (এল.ডি.এল)
ভালো কোলেস্টেরল (এইচ.ডি.এল)
মাঝারি কোলেস্টেরল (ট্রাইগ্লিসারাইড)
অতিরিক্ত ফ্যাট
অতিরিক্ত ফ্যাট শরীরে বা খাবারে কিংবা হৃদযন্ত্রের ধমনীর মধ্যে—ফ্যাট যেখানেই থাক রক্তের মধ্যে তার প্রকাশ ঘটে। অর্থাৎ এল.ডি.এল বেশি, এইচ.ডি.এল কম, ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকবে। এর থেকেই বোঝা যায় যে রক্তে ফ্যাট আছে। এই ফ্যাটই জমা হয়ে রক্ত সঞ্চালনে বাধার সৃষ্টি করে হার্ট অ্যাটাক ঘটায়। এটা ছাড়াও আরও পাঁচটা মেজর রিস্ক ফ্যাক্টর আছে।
বেশি ওজন বা ওবেসিটি। এই ওবেসিটি আবার প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ভিন্ন ধরনের। পাশ্চাত্যে ওজন বেশি বলতে সম্পূর্ণ শরীর জুড়ে ফ্যাট। কিন্তু আমাদের দেশে ওবেসিটির ধরন অ্যাপল সেপ। অর্থাৎ ভুঁড়িটা বেড়ে যায়। পুরো শরীর জুড়ে হয়তো মেদ কম কিন্তু ভুঁড়ির আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে মেয়েদের 80 সে.মি-র নীচে এবং ছেলেদের 90 সে.মি-র নীচে হওয়া উচিত। কিন্তু দেখা যায় সেটা অনেক বেশি।
এল.ডি.এল বা খারাপ কোলেস্টেরল বেশি থাকা।
ডায়াবেটিস। এক্ষেত্রে রোগীদের চেহারায় তত বেশি ফ্যাট না থাকলেও কোলেস্টেরল বেশি থাকে। ফলে সেটার ক্ষতিকর প্রভাব রক্তের ওপরেই পড়ে।
ধূমপান যারা করেন তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ এতে যে টক্সিন পদার্থ আছে সেগুলো শরীরে করোনারি আর্টারিতে যে রক্তধারা বয়ে যাচ্ছে সেখানে জমা হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ। যার রক্তচাপ স্বাভাবিক তিনি মোটা হলেও ততটা ক্ষতি হয় না। কিন্তু বেশি ওজনের মানুষের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ বেশি বিপজ্জনক।
অতএব পাঁচটি রিস্ক ফ্যাক্টর কার কতটা ক্ষতি করে সেটা তার শরীরের অন্যান্য বিষয়ের ওপর। যেমন ধরুন কারোর যদি কোলেস্টেরল বেশি থাকে এবং সঙ্গে শর্করার পরিমাণও বেশি থাকে তবে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যদি উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি কিন্তু থাকে এবং তিনি ধূমপান করতে থাকেন তবে তো ঝুঁকি বেড়েই যায়। আসলে এইগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে।
হার্ট অ্যাটাকে নতুন সংযোজন
আধুনিক যুগে মানুষ বিশেষ করে যুবক থেকে মধ্যবয়সীরা নানাধরনের চাপের মধ্যে থাকেন যেটাকে এককথায় আমরা বলি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। এটা কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। যদি কারোর পারিবারিক ইতিহাসে কম বয়সে স্ট্রোকের ঘটনা থাকে এবং সেই মানুষটি যদি যেকোনো কারণেই টেনশন বা মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তায় ভোগেন তাহলে করোনারি আর্টারিতে ব্লকেজের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
মোটামুটি ফ্যাট সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গেলে একথা বলা যায় যে ফ্যাট এককভাবে খুব ক্ষতি না করলেও অন্য শারীরিক অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই পরিস্থিতি এড়াতে কী করণীয়
এক্ষেত্রে ডায়েট কনট্রোল অবশ্যই করতে হবে। তবে শুধুমাত্র ডায়েট কনট্রোল করলেই চলবে না, ফ্যাটের সঙ্গে অন্যান্য যেসব ক্ষতিকর পদার্থগুলো থাকে সেগুলোও যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করে। তাই এই বিষয়টাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে এবং সঠিক ওষুধ খেতে হবে, নিয়মিত হাঁটতে হবে। ফ্যাট কমানোর জন্য স্ট্যাটিন নামক ওষুধ খুব কার্যকরি। সাধারণত 10 মিলি থেকে 80 মি.লি গ্রাম পর্যন্ত মাপ থাকে। কেউ যদি ভাবেন শুধু ডায়েট কন্ট্রোল করে ফ্যাট কমাবেন তাহলে বলি এতে শুধু 10 থেকে 15 শতাংশ ফ্যাট কমতে পারে। আর ডায়েট কন্ট্রোল সবসময় সম্ভব নয়। এর সঙ্গে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে হবে এবং আমরা স্বীকৃত ওষুধ স্ট্যাটিন প্রেসক্রাইব করি। এতে এল.ডি.এল কোলেস্টেরল অনেক কমে।
তাহলে সামগ্রিক আলোচনায় যে বিষয়টা পরিষ্কার হল তাতে ফ্যাটের গতিপ্রকৃতি, চলন, ক্ষতি করার ক্ষমতা সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়া গেল। ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করতে ডায়েট কন্ট্রোল এবং সেই সঙ্গে শরীরচর্চা অবশ্যই ভালো। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। এর সঙ্গে স্ট্যাটিন ওষুধটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগগুলোর চিকিৎসাও যথাযথভাবে করতে হবে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেই হবে তা হল, এটা জ্বর বা পেটখারাপের মতো অসুখ নয় যে দু’চারদিন ওষুধ খেয়ে বন্ধ করে দেওয়া যাবে। এর চিকিৎসা করতে হবে ধারাবাহিকভাবে এবং আরও পরিষ্কার করে বললে বলব যতদিন বাঁচবেন ওষুধ বন্ধ করা যাবে না, খেয়ে যেতে হবে। আর এইভাবে চললে আপনার হার্ট অনেকখানিই সুস্থ থাকবে যা জীবনকে সুন্দরতর করে তুলবে।

হার্ট ব্লক : প্রতিরোধের উপায়
ডাঃ ডি. কর
মোবাইল : 869728430
E.mail : dr.debdeepkar@gmail.com
হঠাৎ করে ইদানীং খুব কম বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে হার্ট ব্লক দেখা দিচ্ছে। অনেক সময় মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। বয়সটা খুব বেশি নয়, মাত্র 40থেকে 50-এর মধ্যে। লকডাউনের পর এই প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। এর একমাত্র কারণ কায়িক পরিশ্রম না করা, অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া, মানসিক চাপ। হার্ট ব্লক যাতে না হয় তা বোঝার জন্য প্রথমে জানতে হবে হার্ট ব্লক কেন হয়।
লক্ষণ
হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলি হল—পালস্ রেট কম বা অনিয়মিত পাল্স, প্যালপিটেশন বা বুক ধড়ফড় করা। শ্বাসকষ্ট ও ধীরে ধীরে জ্ঞান হারানো। সেই সঙ্গে বুকে ব্যথা, ও বুকে চাপ বোধ বা ভারী বোধ। হার্ট ভালো করে পাম্প করতে পারে না বলে সামান্য পরিশ্রমেই রোগী হাঁপিয়ে যায়।
হার্ট ব্লকের প্রকারভেদ
ফাস্ট ডিগ্রী হার্ট ব্লক : খুব সামান্য ব্লক, প্রায় নর্মাল, সে রকম কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না। এখানে ইলেকট্রিক্যাল ইমপাল্স ভেন্ট্রিকলে পৗঁেছাচ্ছে কিন্তু নর্মালের থেকে কম। ফাস্ট ডিগ্রী হার্ট ব্লক সাধারণত কৈশোর ও যৌবনে দেখতে পাওয়া যায়। আবার যারা খুব নার্ভাস প্রকৃতির লোক তাদের হয়।
সেকেন্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লক : এটিকে আবার দুটো ভাগে ভাগ করা হয়, মবিজ টাইপ-1 এবং মবিজ টাইপ-2। মবিজ টাইপ-1 - এখানে ভয় কম, ইমপাল্স আস্তে আস্তে যায় ও হার্ট পাম্প করতে পারে। মবিজ টাইপ-2 - এখানে ইমপাল্স কখনো পৗঁেছাচ্ছে, আবার কখনো পৗঁেছাচ্ছে না অর্থাৎ অনিয়মিত ভাবে যায়। এখানে হার্ট রেট নর্মালের থেকে কম হতে পারে।
থার্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লক : এখানে ইলেকট্রিক ইমপাল্স অ্যাট্রিয়াম থেকে ভেন্ট্রিকলে পৗঁেছাতে পারে। সেক্ষেত্রে ভেন্ট্রিকল স্পেসমেকারের মতো কাজ করে ইমপাল্স তৈরি করে। এক্ষেত্রে হার্ট বিট স্বাভাবিকের থেকে অনেক কমে যায়। এটি খুব সিরিয়াস কন্ডিশন, কোনোভাবে অবহেলা করবেন না।
কারণ
হার্ট ব্লকের মূল কারণ হলো বয়স জনিত, হার্ট অ্যাটাক বা করোনারী আর্টারি ডিজিজ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, মায়োকার্ডাইটিস, লাইম ডিজিজ, হাই পটাশিয়াম লেভেল, সিভিয়ার হাইপোথাইরয়েডিজম ও কিছু বংশগত নিউরোমাসাকিউলাল ডিজিজ।
লক্ষণ
হার্ট ব্লকের লক্ষণগুলি হল—বুকে ব্যথা, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, কাজ করতে না পারা, সামান্য পরিশ্রমেই বুক ধড়ফড় করা, সবসময় ঝিমুনি ভাব, ইত্যাদি। মনে হয় যেন হঠাৎ করে হার্ট বিট বন্ধ হয়ে গেল। শ্বাসকষ্ট হয়, দীর্ঘ শ্বাস নিতে পারে না, ছোট ছোট করে শ্বাস নিতে হয়।

রিক্স ফ্যাক্টর
করোনারি থ্রম্বোসিস বা হার্টের আর্টারি ব্লক হয়ে যায়। মায়োকার্ডাইটিস বা হার্ট পেশির প্রদাহ। এন্ডোকার্ডাইটিস বা হার্ট ভালভের প্রদাহ। হার্ট অ্যাটাক। হার্টের মধ্যে তৈরি হয় স্কার টিসু্য, যা হার্টকে আরো দুর্বল করে দেয়।
ডায়াগনোসিস
সন্দেহ হলে প্রথমেই করতে হবে ই.সি.জি। এতে বোঝা যাবে ব্লক আছে কি না। ব্লক ডানদিকে না বামদিকে তাও বোঝা যাবে। হলটার মনিটরিং করে হার্ট বিট কেমন সে সম্বন্ধে জানতে পারা যায়। ইকোকার্ডিওগ্রাফি থেকে হার্ট মাসল ও ভালভ সম্বন্ধে জানা যায়।
হার্ট ব্লক প্রতিবোধ করার উপায়
হার্ট ব্লক প্রতিরোধ করতে হলে ডায়েটের উপর জোর দিতে হবে। আপনার খাদ্য তালিকায় বন্ধু ফ্যাট বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত করতে হবে ও ক্ষতিকর ফ্যাট বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট বর্জন করতে হবে। সেই জন্য বেশি ভাজাভুজি ও ফাস্টফুড খাবেন না। এর মধ্যে প্রচুর অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। ভালো ফ্যাটের জন্য বাদাম খাবেন। খাঁটি সরষের তেল, অলিভ অয়েল, মাছের তেল সীমিত পরিমাণে খাবেন। মাছের তেলে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা হার্টের পক্ষে ভালো। টুনা ফিসে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ঘি, বাটার, চিজ ইত্যাদি ডেয়ারি প্রোডাক্ট খাবেন না। ডবল টোনড দুধ ও ঘরে পাতা টক দই খাবেন। কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ চাল, আটা, ময়দা, চিনি ও মিষ্টি বর্জন করতে হবে। লিকার চা খেতে পারেন কিন্তু কফি চলবে না। অ্যালকোহল ও ধূমপান ছাড়তে হবে। বেশি নুন বা নোনতা খাবেন না। কাঁচা নুন একেবারেই খাবেন না।
সারাদিনে অন্তত 30 মিনিট ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করবেন। সকালে বা বিকালে হাঁটবেন, প্রাণায়াম করবেন। সপ্তাহে অন্তত 5 দিন করবেন।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার
এডোনিস ভার ব্লাড ডাইলুট রাখে। সেই জন্য আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এডোনিস ভার মাদার 10 ফোঁটা করে 1 বার খেতে পারেন। 45 বা 50 বছরের পর থেকে এই ওষুধ রাতে 1 বার করে খেতে পারেন। ব্লাড প্রেসার বেশি থাকলে গ্লোনোইন ও রাউলফিয়া ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন। হার্ট ভালো রাখতে ও ছোটখাটো ব্লক দূর করতে ক্যাটিগাস অক্স, ক্যাকটাস জি, অর্জুন খুব ভালো কাজ করে। এই ওষুধগুলির ব্যবহারে হার্টের বড় সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারবেন।

হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
ডাঃ শঙ্কর কুমার চ্যাটার্জী
হার্ট অ্যাটাক (Myocardial Infarction) কথাটি এখন বহুল প্রচারিত ওকটি শব্দ। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব পাশের বাড়ি বা দূরের কারো, প্রত্যেক ঘরে কেউ না কেউ ভুক্তভোগী। প্রতিনিয়ত অসংখ্য রোগীর মৃত্যু হচ্ছে এই মারণরোগ। কিন্তু কীভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায় এই অসুখ, আর যদি হয়েই যায় তবে বাঁচার পথই বা কী?
হার্ট অ্যাটাক থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে জানতে হবে হার্ট অ্যাটাক কেন এবং কীভাবে হয় আর কীভাবে চললে তার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
হার্ট প্রতিনিয়ত সঙ্কোচন প্রসারণ করে সমস্ত কোষের যে রক্ত সরবরাহ করে সেই কার্যক্ষমতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য হার্ট মাসল-এর প্রতিনিয়ত রক্তের প্রয়োজন হয়। যে প্রধান ধমনী বা তার শাখা-প্রশাখা দিয়ে হার্ট মাসল-এর রক্ত সরবরাহ হয় সেই জায়গার মাসল রক্তাল্পতায় ভোগে যাকে Ischaemic Heart Disease বলা হয়। কোন এলাকায় রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ হয়ে গেলে Myocardial Infarction বা হার্ট অ্যাটাকের সৃষ্টি হয়। ধমনীর সঙ্কুচিত জায়গাকে আর্টারী ব্লক বলা হয় যার পরিমাণ পরিমাপ করা যায় অ্যাঞ্জিওগ্রাফি নামক একটি পরীক্ষার সাহায্যে। পঞ্চাশোর্ধ মানুষের 50% বা তার কম পরিমাণ ব্লক দেখা দিলে মেডিসিন দিয়েই চিকিৎসা করা হয়। 60% বা তার বেশি ব্লক থাকলে সার্জারি (অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট বা বাইপাসের) প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। ব্লক যদি এক জায়গায় থাকে তবে সাধারণত Angioplast, Stent ব্যবহার করা হয়। দুই বা ততোধিক জায়গায় ব্লক থাকলে ওপেন হার্ট বা বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আগে যে ওপেন হার্ট বা বাইপাস সার্জারি করা হত, পা থেকে অ্যার্টারি খুলে নিয়ে হার্টের পরিত্যক্ত আর্টারির জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হত। এখন অনেক উন্নতমানের সার্জারি প্রচলিত হয়েছে যার নাম MICS (মিনিমালি ইনডেসিভ কার্ডিয়াক সাজারি) যেটা নামেই বলে দিচ্ছে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু সার্জারি। অর্থাৎ যে জায়গায় ব্লক আছে শুধু সেই জায়গাটা কেটে বাদ দিয়ে অন্য কোনো জায়গা থেকে একটা টুকরো আর্টারি এনে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে। ওপেন হার্ট-এ যেমন বুকের অনেকটা অংশ কেটে অপারেশন করা হয় এখানে বুকের বাঁদিকে ছোট্ট একটা ফুটোর মাধ্যমে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে কম সময়ের মধ্যে অপারেশন করে ফেলা যায়। আর এখানে যেমন সাতদিন বাদেই অফিসে যেতে পারে। বাইপাসে যেখানে লাগে অন্ততঃ একমাস।
কীভাবে জানবেন আপনার ধমনী সরু হয়ে গ্যাছে বা হার্ট মাসলের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা কমে গেছে? সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন বা একটু জোরে হাঁটতে শুরু করেছেন হঠাৎ দেখবেন শ্বাসটা জোরে জোরে নিতে হচ্ছে। বুকের বাঁদিকটা কেউ যেন চেপে ধরছে হয়তো বা কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, একাধিকবার ঘটে। এরকম হয় তবে কালবিলম্ব না করে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে, প্রথমে ই.সি.জি. করে দেখতে হবে, অনেক সময় ইসিজি-তে ধরা পড়ে না, প্রায় 20% ক্ষেত্রে। তাহলে TMT বা ট্রেডমিল করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে ইকো করে দেখা হয়। এর সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হয় কোলেস্টেরল ট্রাইগ্লিসারাইড বিশেষত এল.ডি.এল. মাত্রাতিরিক্ত আছে কিনা। কোলেস্টেরলের অত্যধিক পরিমাণ 250 mg পর্যন্ত কিন্তু এটা একটু বেশি হলেও তেমন ক্ষতি হয় না লাইফ স্টাইল-এর পরিবর্তন ধূমপান বর্জন, মদ্যপান বর্জন অথবা সীমিত পরিমাণে রাখলে, ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করলে এবং নিত্য কায়িক পরিশ্রম বা 2 কিঃ মিঃ প্রাতঃভ্রমণে কোনো স্টোরলের পরিমাণ স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। কিন্তু সমস্যা হয় রক্তে এল. ডি. এল. অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ যদি 100 mg বা তার বেশি থাকে। এসব জেনেটিক বা বংশগত বাবা-মা, বা তাঁর বাবা মায়ের কেমিক্যাল এটা বংশানুক্রমে বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। নির্দিষ্ট ওষুধ ছাড়া এর কমাবার কোনো উপায় নেই, (যদিও এখন ভালো ওষুধ এসে গেছে) লাইফ স্টাইল পরিবর্তন বা ডায়েট কন্ট্রোল করেও এল. ডি. এল. কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ অ্যাটাকের সৃষ্টি করে। যাকে প্যানিক হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। তাই রক্তে যাদের এল. ডি. এল. বেশি আছে তাদের নিজেদের উত্তেজিত হওয়া বা অন্য কাউকে উত্তক্ত করা, অবশ্যই বর্জন করা উচিত।
E.C.G. TMT, Echo আর লিপিড প্রোফাইল করলে বুঝতে পারা যায় হার্টের অসুখ আজ কিনা আর্টারির কোথাও ব্লক আছে কিনা। সাধারণভাবে TMT Positive থাকলে করোনারী ডায়ালেটর দিয়ে চিকিৎসা করা হয় যদিও পর্যন্ত কষ্টের উপসম হয়, কিন্ত যদি দেখা যায় বুকের ব্যথা থেকেই যাচ্ছে তখন Angiogram করে ব্লক-এর পরিমাপ করা হয়, কোনো ব্লক যদি 70% বা তার বেশি হয় এবং হাঁটাচলায় কষ্ট হয় তখন Stent বসাতে গেলে খরচ অনেক বেশি পড়ে বাইপাসের থেকে। আর Stent বসানোর পর 5 থেকে সাত বছর পরে আবার ধীরে ধীরে ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায় যাকে Recamalisation বলা হয় তখন আবার Stent বসানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই কোনো রোগীর কোনটা প্রয়োজন তার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কেন হয় এ অসুখ– ছোটবেলায় কোনো সমস্যা হয় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন ধরা পড়ে।
প্রথমতঃ বংশগত। কারো ফ্যামেলিতে যদি 50 বছর বয়সের আগে হার্ট অ্যাটাক হয় তার থেকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে তবে তার পরবর্তী প্রজন্ম হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে।
রক্তচাপ বৃদ্ধি হার্ট অ্যাটাকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, এটাও বংশগত। এছাড়া ডায়াবেটিস ও পরবর্তী প্রজন্মে প্রভাব বিস্তার করে হার্টের অসুখ ডেকে আনতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ মানষিক চাপ বৃদ্ধি বা Stress, এবং বিশ্রামহীন অতিরিক্ত পরিশ্রম। কায়িক পরিশ্রম যেমন হার্টের রক্ত চলাচলে সহায়তা করে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম ঠিক উল্টোটাই করে, হার্টকে Damage-এর মুখে ঠেলে দেয়। তাই হার্টের অল্প কিছু পরিবর্তন দেখা দিলে সচেতন হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। অসুস্থ হার্ট খুব স্পর্শকাতর সামান্য সংকেত পাঠাতে শুরু করে। কোনোদিন অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে দুটো বা তিনটে ব্লক ধরা পড়ল অথবা হার্ট অ্যাটাক নিয়েও হসপিটালে ভর্তি হল–এটা সাধারণতঃ দেখা যায় না। হয়তো তার কাছে আগেই সংকেত ছিল কিন্তু তিনি তাকে অগ্রাহ্য করেছেন বা কোনো গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি।
হার্ট অ্যাটাকের পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা আবশ্যিক, প্রথম দু থেকে তিন ঘণ্টার ভেতর চিকিৎসা শুরু করতে পারলে সব থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই প্রথম দু-তিন ঘণ্টা চিকিৎসার ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়, দেরী করে ফেললে হার্ট মাসল নেক্রোসিস হতে শুরু করে ফলে চিকিৎসার আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না।মন সর্বদা প্রফুল্ল রাখুন। পেটের অতিরিক্ত মেদ জমতে দেবে না। লবণ জাতীয় খাবার কম খান। পাতে অতিরিক্ত লবণ একেবারেই না। ধূমপান ভুলে থাকুন। মদ্যপানের অভ্যেস না থাকলেই ভালো। দুপুরে না ঘুমানো এবং প্রতিদিন একঘণ্টা প্রাতঃভ্রমণ করুন। বুকের যে কোনো কষ্টে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে না ভুলে আপনার হার্ট অবশ্যই ভালো থাকবে।

Comments